এস আলমসহ দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিচার কীভাবে করবে অন্তর্বর্তী সরকার?

এস আলমসহ দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিচার কীভাবে করবে অন্তর্বর্তী সরকার?

বাংলাদেশে সম্প্রতি অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঘুস বাণিজ্য, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী থেকে শুরু করে বড় বড় আমলারা যেমন রয়েছেন, তেমনি দেখা যাচ্ছে একাধিক ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর নামও। 

তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে দেশটির অন্যতম বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ‘এস আলম গ্রুপ’। 

গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়েছে, যার একটি বড় অংশই অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অর্থের বেশিরভাগই আবার বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের নামে।

অন্যদিকে, ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তিন ডজনেরও বেশি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এর বাইরে, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলোচনায় রয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ, ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানসহ আরও বেশ কয়েকজন আমলা।

উল্লেখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে।

কিন্তু তৎকালীন ‘ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ’ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সেভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে ‘সরকারি মদদে লুটপাটে’র সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এখন ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে পারবে? কীভাবে করা হবে দোষীদের বিচার?

দুর্নীতির অর্থের বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে
ছবির ক্যাপশান, দুর্নীতির অর্থের বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে

এস আলমের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বাংলাদেশের একাধিক ব্যাংকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের।

এর মধ্যে কেবল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছ থেকেই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, যার বড় একটি অংশই নেওয়া হয়েছে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংককে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করা হতো।

২০১৭ সালে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর গত প্রায় সাত বছরে নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে গোষ্ঠীটি। এর ফলে রীতিমত তারল্য, তথা নগদ টাকার সংকটে পড়ে যায় ব্যাংকটি।

ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও গ্রুপটির মালিকানা আরও পাঁচটি ব্যাংক রয়েছে। সেগুলো হলো: সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক।

অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির কারণে এসব ব্যাংকগুলোতেও তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।

উল্লেখিত ছয়টি ব্যাংকের বাইরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক থেকেও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে এস আলম পরিবার।

এক্ষেত্রে একক কোনো ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ না দেওয়ার বিধান থাকলেও সেটি মানা হয়নি। নিয়ম ভেঙে গ্রুপটিকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেটি ব্যাংকের মোট মূলধনের প্রায় ৪২০ শতাংশ।

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন

আদালতের নির্দেশ দিলে তদন্তকালে দুর্নীতির সম্পত্তি জব্দ করা যায়
ছবির ক্যাপশান, আদালতের নির্দেশ দিলে তদন্তকালে দুর্নীতির সম্পত্তি জব্দ করা যায় 

এদিকে, গত দেড় দশকে নামে-বেনামে এস আলম ঋণ হিসেবে যত টাকা ব্যাংক থেকে নিয়েছে, সেটার বেশিরভাগই বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে যে, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যে তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রয়েছে, সেখানে এস আলম গ্রুপের নাম নেই।

বিদেশের পাশাপাশি দেশেও গত কয়েক বছরে একাধিক বাড়ি ও জমি কিনেছে গ্রুপটি। শিল্প কারখানার নামে ঋণ নিয়ে সেই টাকা ব্যবহার করে ওইসব সম্পত্তি গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে কাজ করে দুদক
ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে কাজ করে দুদক

তদন্ত কতদূর?

ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলমের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরেই নানান অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তে ২০২৩ সালের অগাস্টে একটি রুলও জারি করেছিল হাইকোর্ট, যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বিষয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে জানিয়েছিল আদালত।

কিন্তু তারপরও এতদিন এস আলমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ সেভাবে দেখা যায়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে গ্রুপটির এক ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় দুদক কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে মনে করেন অনেকে।

কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নড়েচড়ে বসেছে দুদক।

“ইতোমধ্যেই আমরা প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।

বাংলাদেশে অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে
ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশে অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে

অন্যদিকে, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির যে অভিযোগ রয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত দল গঠন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর)। বিষয়টি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

এছাড়া এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য জানতে চেয়ে সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।

এর আগে, প্রাথমিক তদন্তে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় গত জুনে গ্রুপটির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এস আলম পরিবারের হাতে থাকা ছয়টি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের উপর। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)’।

বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ কয়েক গুণ বেড়েছে
ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ কয়েক গুণ বেড়েছে

অন্যদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা?

এস আলম গ্রুপ ছাড়াও দুদক আওয়ামী লীগের অন্তত ৪১ জন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকই বিগত সরকার আমলে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিলেন।

তাদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দুর্নীতির তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি।

“ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি এবং তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকার ঘুস বাণিজ্য চালিয়েছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি,” বিবিসি বাংলাকে বলেন দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা।

“উনার বাসায় বস্তায় করে টাকা পাঠানো হতো- এমন তথ্যও আমরা পেয়েছি,” বলছিলেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মি. খানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মূলত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাকে প্রকাশ্যেও দেখা যায়নি। মি. খান দেশে নাকি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, সেটিও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে, মি. খান ও তার ছেলেসহ বেশ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ ‘বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’কে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুদক।

একইভাবে, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে মি. জাবেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশ করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। দুর্নীতির টাকা পাচার করে তিনি বিদেশে সম্পদ কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে মি. জাবেদ গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, পারিবারিক ব্যবসার লাভের টাকা দিয়েই তিনি বৈধভাবে বিদেশে সম্পত্তি কিনেছেন। 

অন্যদিকে, উপরের দু’জন ছাড়াও দুদকের অনুসন্ধানের তালিকায় রয়েছেন: সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মণি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক।

এছাড়াও রয়েছেন: ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

এদের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী মি. হককে ইতোমধ্যেই অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন
ছবির ক্যাপশান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন

এছাড়া, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তাদের স্ত্রী এবং সন্তানদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

অন্যদিকে, ঘুস ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। মি. রশীদ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। 

একই সঙ্গে, ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খান, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।

এর আগে, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন।

মি. আহমেদ এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে একাধিক ফ্ল্যাট, ছয়শ বিঘার বেশি জমি ছাড়াও উনিশটি কোম্পানির শেয়ার এবং ত্রিশ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে, যা আদালতের নির্দেশে ইতোমধ্যেই জব্দ করা হয়েছে বলে দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষ না হওয়ায় অভিযুক্তদের কারো বিরুদ্ধেই এখনও মামলা করা সম্ভব হয়নি বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, অর্থ পাচার এবং শেয়ার বাজারে কারসাজির অভিযোগ থাকলেও এখনো অনুসন্ধান শুরু হয়নি।

স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে মি. রহমান বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে নিয়ম ভেঙে অর্ধেকেরও বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক থেকে।

ঋণ খেলাপিদের তালিকাতেও মি. রহমানের নাম রয়েছে শুরুর দিকে।

“তবে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় উনার ব্যাপারে এখনও অনুসন্ধান শুরু হয়নি,” বিবিসি বাংলাকে বলেন দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা।

যদিও ঢাকার নিউ মার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় মি. রহমানকে সম্প্রতি গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *